Friday , April 26 2024
সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ
Home / জয়পুরহাট সদর / জয়পুরহাটে জাতীয় শোক দিবসে মানবিক সহায়তা নিয়ে পুলিশ পত্মী

জয়পুরহাটে জাতীয় শোক দিবসে মানবিক সহায়তা নিয়ে পুলিশ পত্মী

আতাউর রহমান

‘ভূমিহীন। লতিফা বেগম। বয়স ৫৫ বছর। বাড়ি দোগাছি গ্রামে। স্বামী কাবেজ আলী ৩ বছর থেকে শ্বাসকষ্ট (হাঁপানি) রোগে শয্যাশায়ী। কোন কাজকর্ম করতে পারিনা। এক মেয়ে দুই ছেলে সকলের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা যার যার মতো সংসার চালায়। কেউ কোন খরচ দিতে পারেননা। কারণ তারা নিজেরাই চলে, খুব কষ্টে। তেমন কোনো কাজ করতে পারিনা। ফার্মের ছোট ছোট ২০-২৫টি করে মুরগি পালন করি। বড় হলে বিক্রি করি।অবসরে কাঁথা সেলাই করি। যে লাভ হয়, সেই টাকার সাথে বয়স্ক ভাতা তিন মাস পর পর পাওয়া পনেরোশো টাকা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। এর আগে কখনও এ ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। এবারই প্রথম পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলাম। এ সহযোগিতা পেয়ে আমি খুব খুশি।’

জাতীয় শোক দিবসে জয়পুরহাট সরকারি রামদেও বাজলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে পুলিশ পত্নী ও নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)’ এর আয়োজনে ২০০ জন অসহায় দরিদ্র নারী-পুরুষের মাঝে বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা বিতরণ অনুষ্ঠানে ত্রাণ সামগ্রী নিতে আসা ভূমিহীন লতিফা বেগম কথাগুলো বলেন।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে জয়পুরহাটে নজিরবিহীন নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে অনুস্মরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পুলিশ। এই করোনা মহামারীতেও অক্সিজেন ব্যাংক তৈরী করে সেখান থেকে আক্রান্ত রোগীদের ২৪ ঘন্টা সেবাদান পুলিশের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পুলিশের এই অনবদ্য ভূমিকায় দৃষ্টি কেরেছে জেলাবাসীর।
‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই শাশ্বত উক্তিতে উজ্জীবিত হয়ে স্বামী পুলিশ সদস্যদের ভালো কাজে উৎসাহ যোগাতে মানব সেবায় নেমেছেন পুলিশ পত্নীরা।

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভূঁঞা’র সহধর্মিনী এবং পুনাক’ এর সভাপতি ডা. রেবেকা শারমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জীবন নাহার এবং সিনিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) ইশতিয়াক আলমের সহধর্মিনী ও সংগঠনটির কার্যকরী সদস্য তাজমা ইসলাম উপস্থিত থেকে দুঃস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ সময় ২০০ জন দরিদ্র মানুষের প্রত্যেককে- ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আটা, ২ কেজি ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল ও ৫টি করে মাস্ক দেওয়া হয়।

ত্রান সামগ্রী নিতে আসা সদরের নতুনহাট সরদারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ভূমিহীন মনোয়ারা বেওয়া জানান, বিশ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন। সংসারে দুই ছেলে এক মেয়ে। ভূমিহীন, গৃহহীন হওয়ায় অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকেন। ভারী কোন কাজ করতে পারবেননা। বাজার থেকে ১ কেজি কাঁচা বাদাম কিনে দুদিনে তা বিক্রি করেন। লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ টাকা। সেই টাকার সাথে তিন মাস পর পর বিধবা ভাতা বাবদ পাওয়া ১৫০০ টাকায় কোনো রকমে টানাটানি করে দিন চলে যায়। তিনি আরও জানান, এর আগে তিনি কখনও এ ধরণের সহায়তা পাননি। কেউ তার নাম দেয়না। পুলিশরা তাকে সহায়তা করায়
তিনি খুব খুশি।

এছাড়াও দোগাছি জিতারপুর গ্রামের বদি (৬৪), পশ্চিম পেঁচলিয়া গ্রামের বেলাল (৬৫), জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট সরদারপাড়া এলাকার মনোয়ারা বেওয়া (৫০)সহ ত্রান সামগ্রী নিতে আসা অনেকে জানান, এক সময় জয়পুরহাটে সন্ত্রাস, খুন, পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানী, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধ হতো, পুলিশী তৎপরতায় এখন তা বন্ধ, পুলিশের ভূমিকা এমন হলে সমাজে কোন অরাজকতা থাকবে না বলে জানান তারা। এর পাশপাশি পুলিশ পত্নীরা যদি মানবিক ও সামাজিক কাজগুলো অব্যাহত রাখেন তাহলে পুলিশ ভালো কাজে আরো উৎসাহিত হবেন।

 

About Joypur Hat

Check Also

জয়পুরহাটে ৫ বছরেও শেষ হয়নি ফোরলেন রাস্তার কাজ, ভোগান্তি

  মিলন রায়হান, জয়পুরহাট দেড় বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি জয়পুরহাট …