জয়পুরহাট থেকে আতাউর রহমান
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বেলআমলা গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক বারোশিবালয় মন্দিরে লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া। অথচ এটি প্রাচীন ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন। এ জন্য এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এলাকার সনাতন ধর্মালম্বিদের অভিযোগ, ঐতিহাসিক এ মন্দিরটির উন্নয়নে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ থেকে কোন সরকারি বরাদ্দ পাননি তারা। রাস্তার কাজের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মন্দিরের প্রাচীরের উত্তর পাশ থেকে মাটি কেটে গর্ত করেছে।
কিন্তু সে গর্ত আজও ভরাট করা হয়নি। তাদের দাবি, বর্তমান সরকার যেহেতু দেশের বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, গির্জার উন্নয়নে বরাদ্দ দিচ্ছে। সেজন্য কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঐতিহাসিক এ বারো শিবালয় মন্দিরে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে, মন্দিরের প্রাচীরের উত্তর পাশের গর্তটি ভরাট করে দিবে বলে, তারা আশাবাদী। মন্দিরে পূজা দিতে আসা নওগাঁর বদলগাছি সরকারি কলেজের অবসর প্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুবাস সিংহ, বদলগাছি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ এবং মহাদেবপুরের যুগলচন্দ্র পাল জানান, মনের আশা পুরনের জন্য তারা এ মন্দিরে শিবঠাকুরকে পূজা দিতে এসেছেন। তাদের মতো শত শত পূজারি প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে এখানে আসে। সরকারি বরাদ্দ পেলে এ মন্দিরের শ্রী বৃদ্ধি হতো। সকলের ভালো লাগতো। মন্দিরের সহসভাপতি বিশ্বনাথ আগরওয়ালা জানান, মন্দিরের উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন অনুদান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় মোহাম্মেদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, মন্দিরের উন্নয়নে কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। শুধু চল্লিশ দিনের লেবার দিয়ে, মন্দিরের ঘাসগুলো পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে বরাদ্দ পেলে এ মন্দিরে দেয়া হবে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস.এম সোলায়মান আলী জানান, বারো শিবালয় মন্দিরে তারা কোন বরাদ্দ দেননি। এটা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পরেনা। কারণ, এটা জেলা পরিষদের আওতাভ‚ক্ত। তা সত্বেও কেউ আবেদন করলে বা টাকা চাইলে দেয়া হয়।
জয়পুরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট জানান, জেলা পরিষদের অনুদান- মন্দির, মসজিদ, গির্জা সব জায়গায় পর্যায়ক্রমে দেয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে, যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এখনো অনুদান পৌঁছেনি; যোগাযোগ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে তাদের বরাদ্দ দেয়া হবে। জানা গেছে, বারোটি শিবমন্দির প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের সাক্ষ্য বহন করে আজো দাঁড়িয়ে আছে। এর সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, রাজা বল্লাল সেন ছিলেন শিবের উপাসক। তিনি এই মন্দির স্থাপন করেন। আবার কারো কারো মতে, লোচন মন্ডল নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। যিনি বারোশিবালয় মন্দিরটি নির্মাণ করেন। স্থানীয় সনাতন ধর্মালম্বীরা জানান, প্রতিবছর ফাগুনমাসের অমাবস্যায় শিব চতুর্দশীর শিবরাত্রি উপলক্ষে এ বারোশিবালয় কে ঘিরে পূজা অর্চনা আয়োজন করা হয়। আর এ লক্ষ্যে এখানে বিশাল মেলা বসে। মেলায় মানত, শিবদর্শন, গীতা পাঠ, উলুধ্বণি আর ঐতিহ্যবাহী ঢাক ঢোলের বাজনায় সারা এলাকা মুখরিত হয়। এছাড়া মেলায় দেশের সুখ-সমৃদ্ধি ও মানব কল্যাণে শিবঠাকুরকে সন্তুষ্ঠ করতে আলো আধারির মাঝে কীর্তন গানের অনুষ্ঠান করা হয়।
মেলায় শাখা-সিদূর, পৈতা, তিলক, পুতির মালা, কাঠের জালি, পুতুল, খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিসপত্রসহ, বিভিন্ন প্রকার আসবাব-পত্র বেচা কেনা জমে উঠে। প্রাচীন ঐতিহ্য আর পুরাকীর্তির খোঁজে ঘুরে বেড়ান যারা তাদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ শত বছর আগে নির্মিত জয়পুরহাটের বারোশিবালয় মন্দির। শান্ত সবুজ পরিবেশ আর ছোট যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই প্রাচীন স্থাপত্য টি জুড়ে রয়েছে ১২টি মন্দির।