মো. আতাউর রহমান,কালাই
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পূর্ব দিকে পিচঢালা মহা সড়কের সীমান্তবর্তী স্থানটির নাম বাঁশের ব্রীজ। সীমান্তের সেই মহা সড়ক থেকে দক্ষিণ দিকে তাকালে অনেক দূরে নজরে পরে ছবির মতো ছোট্ট একটি গ্রাম। চারিদিকে ফাঁকা। সবুজ শ্যামলে ঘেরা ধুধু মাঠ। সেখানে পৌঁছতে হলে অতিক্রম করতে হবে প্রায় ৩ কিলো পথ। ঠিক পথ নয়। আঁকা-বাঁকা বয়ে চলা খালের পাড়ের মেঠোপথ ধরেই ওই গ্রামে যেতে হয়। পথের ধারে অবারিত ফসলের মাঠ। গ্রামটির নাম ‘বান্দইল’। বর্তমানে কাগজে-কলমে তা ‘শিকটা সীমান্তপাড়া’ বলে পরিচিত। রাস্তার জন্য এ গ্রামবাসী আছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
গ্রামে পৌঁছতেই চোখ পড়ে মুরগি আর পাতিহাঁসের দলে। মুরগির র্কর্ক আর হাঁসের প্যাঁক্ প্যাঁক্ শব্দে মন ভরে যায়। খালের বাঁকেবাঁকে কলমি ফুল আর বাতাসে গাছে গাছে দোল খাওয়া জবাফুলে চোখ জুড়ে যায়। গ্রামের ঘেঁষা পতিত জমিতেই দলগতভাবে খেলাধুলা করে হাস্যোজ্জ্বল শিশুরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ৪০টি পরিবার মিলেমিশে বসবাস করে ‘বান্দইল’ গ্রামে। এদের জীবন যাত্রার মান অত্যন্ত হীন এবং মানবেতর। এখানে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নেই খেলার মাঠ। স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেহাল দশা। নিকটবর্তী খাল, জমির আইল ও ঝোপঝাড়ে পেশাব-পায়খানা করে গ্রামবাসী। উপযুক্ত রাস্তার অভাবে এরা গ্রাম থেকে গ্রামে জমির আইল ধরে আর পিচঢালা মহা সড়কে যাতায়াত করে খালের পাড়ের মেঠোপথে ধরে।
বান্দইল গ্রামের শাজাহান আলী, খোরশেদ, তারা বানু ও কোমলা বেগম জানান, তাদের সমস্যার শেষ নেই। শুকনো মৌসুমে তারা জমির আইল দিয়ে চলাচল করেন। কিন্তু রাস্তার অভাবে বর্ষা মৌসুমে চলাচল করতে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তখন তারা উৎপাদিত ফসল বেচাকেনা করতে পারেননা। ছেলেমেয়েরা টানা ৩ থেকে ৪ মাস স্কুলেই যেতে পারেনা। গর্ভবতী মেয়েদের প্রসবকালীন সমস্যায় বা অন্য কোন গুরুতর রোগে আক্রান্তদের কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়।
এ গ্রামের পঞ্চাশ বছর বয়সী মকবুল হোসেন জানান, ২৫ বছর আগ থেকেই তারা এখানে বসবাস করেন। লেখাপড়া শিখতে না পারায় তারা চোখ থেকেও অন্ধ। যোগাযোগের বেহাল অবস্থার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত তারা বিদ্যালয়ে যায়না। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত যাতে তাদের মতো না হয়, সেটাই তাদের প্রত্যাশা।
কালাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন জানান, ‘বান্দইল’ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। যা দূর করার জন্য নানা বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুত খালের পাড়ের মেঠোপথ পাকা করণের আওতায় আনা হবে।