মাসুদ রানা
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো বাঙালি অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছেন দেশের জন্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। তাদের কেউ আমাদের চেনা, কেউবা অচেনা। বাঙালির শ্রেষ্ঠ এই সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উজ্জীবিত রাখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য ও স্মৃতিফলক। এছাড়া প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে আছে বধ্যভূমি। জয়পুরহাট জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভূমি নিয়ে লিখেছেন মাসুদ রানা
উত্তরাঞ্চলের ছোট একটি জেলা জয়পুরহাট। জেলা শহরের কেন্দ্রস্থল শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে নির্মিত হয়েছে ৭১ ফুট উঁচু স্মৃতিস্তম্ভ। এই স্মৃতিস্তম্ভটি আজও মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধে উৎসর্গকারী লাখো শহীদের স্মৃতির কথা।
শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি শহীদ মিনার অনেক আগে থেকেই ছিল। এই শহীদ মিনারের পশ্চিম পার্শ্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৯১ সালে নির্মাণ করা হয় ৭১ ফুট উঁচু একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরের সাথে মিল রেখে ৭১ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। সেই সময়ের জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় এবং স্থানীয় কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। এই স্মৃতিস্তম্ভটি দেখলে আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের অপরূপ নির্দশন লক্ষ করা যায়, যা মুক্তিযুদ্ধ তথা জয়পুরহাটবাসীর জন্য এক গৌরবগাথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এছাড়া শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জেলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি উন্মোচন করা হয় ”প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ ‘৭১” নামের ভাস্কর্য। এটি সেই সময়ের পুলিশ সুপারের প্রচেষ্টায় এবং স্থানীয় কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়। পাঁচবিবি উপজেলায় ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল মঙ্গলবার পাকিস্তানি সৈন্যরা পাঁচবিবি থানা দখল করে নেয়। সেখানে তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হতাহত করে অনেক নিরীহ মানুষ। পুরাতন সিও অফিস, বকুলতলা, নন্দাইল ও বাগজানাসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৪ এপ্রিল থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাঁচবিবি পাঁচমাথায় নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। এছাড়া পাঁচবিবি আদিবাসী এলাকা নন্দাইলে একটি শহীদ স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর যারা মারা গেছেন তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নন্দাইল গ্রামে তৈরি করা হয়েছে এই আদিবাসী ভাস্কর্য।